তথ্য প্রযুক্তি

পেপ্যাল নিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা কী ভাবছেন?

এ বি এন এ : অবশেষ বাংলাদেশে চালু হচ্ছে অনলাইন-ভিত্তিক অর্থ লেনদেনসেবা পেপ্যাল। পেপ্যালের সঙ্গে কিছুদিন আগে চুক্তি করেছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পক্ষে উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এ চুক্তিতে সই করেন। প্রথমে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে খসড়া চুক্তিতে সই করে তা পাঠানো হয় পেপ্যালের সদর দপ্তরে। সেখান থেকে পেপ্যালের পক্ষে চুক্তিতে সই করা হয়েছে বলেও সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে। এর ফলে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কাজে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা। বাংলাদেশে পেপ্যাল চালু হওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সার।

দেশে অর্থ আনার একটি অতিরিক্ত মাধ্যম যোগ হবে
এমরাজিনা ইসলাম

ফ্রিল্যান্সার। বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্ত
পেপ্যাল আসছে, এমন খবর আমরা আগেও অনেকবার শুনেছি। কিন্তু এবার মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছি পেপ্যাল আসছে। এটি আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ। কারণ, টাকা আনার একটি অতিরিক্ত মাধ্যম আমরা পেতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি জানি না বাংলাদেশে পেপ্যাল কেমন ফি কাটবে। আমি বর্তমানে পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডে এবং ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে টাকা আনছি। পেওনিয়ারের চার্জের চেয়ে যদি পেপ্যালের চার্জ বেশি হয়, তবে পেপ্যালে টাকা আনব না। চার্জ কম রাখলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অনেক ভালো হবে। যেসব মাধ্যম আছে টাকা আনার, তার মধ্য থেকে পেপ্যালের পরিচিতি অনেক বেশি, এটি সব দেশে অ্যাকসেস আছে। তা ছাড়া অনলাইন কেনাকাটার জন্য পেপ্যাল খুবই ভালো একটি মাধ্যম হবে। খুব সহজেই কেনাকাটা করা যাবে। মাঝে আমি কিছুদিন একটা মার্কিন ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রির জন্য দিয়েছিলাম। সেখানে শিল্পীরা তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু বিক্রির টাকা আনার একমাত্র মাধ্যম ছিল পেপ্যাল।

ই–কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ
মাহফুজা সেলিম
ফ্রিল্যান্সার। বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্ত
পেপ্যাল একটি সহজ, নিরাপদ ও সর্বাধিক ব্যবহৃত অর্থ লেনদেনের মাধ্যম। অধিকাংশ বিদেশি ক্রেতা এতে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যখনই আমরা জানাই যে আমাদের দেশে পেপ্যাল কাজ করে না, তখন তাঁরা পাশের দেশ বা অন্য কোথাও থেকে কাজটি করিয়ে নেন। এটি হয়তো তাঁর মনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেখানে পেপ্যালের মতো একটি সাধারণ লেনদেনব্যবস্থা নেই, সেখানে কাজ করতে গিয়ে হয়তো নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়ে গেলেও তাঁকে আবার তৃতীয় একটি পেমেন্ট সিস্টেম খুঁজতে হয়, যেটিতে হয়তো ক্লায়েন্ট লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
আমার মনে হয়, পেপ্যাল এলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। দেশে প্রচুর ক্লায়েন্ট আসবেন, রেমিট্যান্স বাড়বে কয়েক গুণ। বর্তমানে আমরা যেসব লেনদেনমাধ্যম ব্যবহার করি, এগুলো তুলনামূলক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। পেপ্যাল এলে এই সমস্যা দূর হবে। পেপ্যাল শুধু মুক্ত পেশাজীবীদের (ফ্রিল্যান্সার) জন্যই নয়, দেশের ই-কমার্স ও অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

এর-ওর কাছে যেতে হবে না
শাহরিনা ইয়াসমিন
ফ্রিল্যান্সার, বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কারপ্রাপ্ত
পেপ্যাল সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়। আন্তর্জাতিক বাজারে পেপ্যালের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশে পেপ্যাল এলে শুধু ফ্রিল্যান্সাররা নন, আন্তর্জাতিক অনলাইন বাজার থেকে কেনাকাটা শুরু করে সবকিছুই সহজ হয়ে যাবে। অনলাইনে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে গেলে পেপ্যালের দরকার হয়। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মতো প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক কোনো ওয়েবসাইট থেকে নিতে হলে পেপ্যালের কোনো বিকল্প নেই। আমি যুক্তরাষ্ট্রে যখন থাকতাম, তখন পেপ্যাল ব্যবহার করেছি। আমার কাছে অনেকে যোগাযোগ করতেন প্রশিক্ষণের এই ফি দেওয়ার জন্য। অনেকে দেখা যায় শুধু পেপ্যাল বা এমন লেনদেনের মাধ্যমের জন্যই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছেন না। বাংলাদেশে পেপ্যাল এলে খুবই ভালো হবে বলে মনে করি। আমি এখন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনছি। তিন-চার বছর ধরে বেশ কটি ব্যাংক এই সুবিধা দিচ্ছে।

আর লজ্জা পেতে হবে না
ওবায়েদুল ইসলাম
আউটসোর্সিং প্রশিক্ষক
পেপ্যাল এলে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হলো নিজের একটা ঠিকানা থাকবে। এর-ওর কাছে গিয়ে বায়না ধরতে হবে না। বাইরের অনেক ই-কমার্স সাইট আছে, যেগুলোতে পেপ্যাল ছাড়া কোনো লেনদেন হয় না। ইবেসহ বিভিন্ন সাইটে শুধু পেপ্যাল দিয়েই লেনদেন করা সম্ভব। পেপ্যাল এলে এই কেনাকাটাগুলো অনেক সহজ হবে। বড় কথা হলো, বাইরের ক্লায়েন্টের কাছে লজ্জা পেতে হবে না। কারণ, তাঁরা চান পেপ্যালে লেনদেন করতে। এখন ভয় হচ্ছে, কেমন চার্জ দিতে হবে? কী শর্ত আর কোন পরিমাণ অর্থ লেনদেন করতে পারব, এটা আসল বিষয়। লেনদেনে কোনো লিমিট দিয়ে দিলে সেটার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। আমার চাওয়া হলো, সরকার এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে যেন কাজ করে এবং ভ্যাটের পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয়।

কেনাকাটা সহজ হবে
রাসেল আহমেদ
ফ্রিল্যান্সার, প্রধান কর্মকর্তা, আর আর ফাউন্ডেশন
পেপ্যাল বাংলাদেশে এলে লেনদেন অনেক সহজ হবে। আমি এখন সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ আনছি। এতে অবশ্য ফি একটু বেশি কাটছে। কিন্তু পেপ্যাল এলে অর্থ সরাসরি পাব। আর চার্জও তুলনামূলকভাবে কম হবে। বাইরের গ্রাহকেরা পেপ্যালে পেমেন্ট করতে চান। এই সমস্যাটি আর থাকবে না। তা ছাড়া এতে স্থানীয় ই-কমার্স সাইটগুলো লাভবান হবে। পেপ্যালের মাধ্যমে কেনাকাটাও সহজ হয়ে যাবে। পেপ্যাল ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে, এখন দেখার ব্যাপার কী কী শর্ত দেয়।

 

পেপ্যাল নেই এমন উত্তরে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়
শাহ ইমরাউল কায়ীশ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেকনো বিডি ওয়েব সলিউশন্স
পেপ্যাল বাংলাদেশে এলে সুবিধা অনেক। আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে। অনেক সাইট আছে, যেখানে পেপ্যাল ছাড়া কোনো কিছু কাজ করে না। একটা বিষয় দেখা যায় যে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা কিছু কিনতে চাইলে পেপ্যালের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে চান। পেপ্যাল নেই এমন উত্তরে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। পেপ্যালের নেটওয়ার্ক অনেক বড়। বাইরে থেকে খুব সহজেই পছন্দের পণ্য কেনা যাবে পেপ্যাল এলে। এখন দেখার বিষয় পেপ্যাল বাংলাদেশে কীভাবে আসে। তাদের মডেলটি কেমন হবে বাংলাদেশের জন্য।

এখন যে মাধ্যমে অর্থ আসে 
*  সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে (ওয়্যার ট্রান্সফার)
* পেওনিয়ার (মাস্টার কার্ড)

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button