এবিএনএ : নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা এবং বিত্তশালীদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ম্যানহাটানের লোয়্যার ইস্ট সাইডের এপার্টমেন্ট থেকে তরুণ-উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ্ (৩৩)’র খণ্ডিত লাশ উদ্ধারে হয়েছে। এ ঘটনার ৩৫ ঘণ্টার মধ্যেও পুলিশ হত্যার মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হয়নি। এমনকি ঐ বহুতলা ভবনের সিসিটিভিতে ধারণকৃত মাথায় টুপি, হাতে গ্লোভস এবং মুখোশ (মাস্ক) পরিহিত ব্যক্তির পরিচয়ও উদ্ধার করা যায়নি।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফাহিমকে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। প্রতিহিংসাপরায়নতার চরম প্রকাশ ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ডে-এমন অভিমত পুলিশের। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসেবে অনেকেই ‘ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব’ মনে করছেন এবং পেশাদার খুনী ভাড়া করে ফাহিমকে খুন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে ১০ তলার ঐ এপার্টমেন্ট ভবনের সপ্তম তলায় নিজ এপার্টমেন্টে ফিরেন ফাহিম। এরপর সারারাত এবং পরদিন মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও ফাহিমকে ফোনে না পেয়ে তার খালাতো বোন ছুটে আসেন ঐ ভবনে। এরপর এপার্টমেন্টে গিয়ে আৎকে উঠেন ফাহিমের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ পলিথিন ব্যাগে দেখে। সাথে সাথে ফোন করেন ফাহিমের ছোটবোন রিফ-সালেহ। রিফ পেশাগত কারণে ম্যানহাটানেই আলাদা বাসায় বসবাস করেন। দ্রুত চলে আসেন তিনি এবং এরইমধ্যে ৯১১ এ কল করা হয়।
দুই বেডরুমের বিলাসবহুল-সুপরিসর এপার্টমেন্টটি বছরখানেক আগে সোয়া দুই মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করেন ফাহিম। জন জে হাইস্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০৩ সালে শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীদের জন্যে ওয়েবসাইটে ভিডিও গেম (উইজ টিন) তৈরী করায় বিপুল অর্থ আয়ে সক্ষম হন। এভাবেই ২০০৫ সালে হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের পর বস্টন সিটি সংলগ্ন বেন্টলী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং বিশেষ কৃতিত্বের সাথে ২০০৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। ফাহিমের মা-বাবা ৩০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে সৌদি আরবে থাকতেন। সেখানেই জন্ম ফাহিমের। যুক্তরাষ্ট্রে এসে গোটা পরিবার উঠেছিলেন নিউইয়র্কের রচেস্টার সিটিতে।
এরপর বেড়ে উঠা এবং লেখাপড়া করেছেন নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৮০ মাইল দূর পকিস্পী সিটিতে মা-বাবা আর বোনদের সাথে অবস্থান করে। করোনার প্রকোপ শুরু হবার পর নিউইয়র্কসহ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র লকডাউনে যাবার সময় অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্ত সেই বাড়িতেই ছিলেন ফাহিম। লকডাউন শিথিল হওয়ায় ব্যবসায়িক যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে নিজের কেনা ম্যানহাটানের লোয়্যার ইস্ট সাইডে সাফোক স্ট্রিটের ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের ওপর লাক্সারি এই এপার্টমেন্টে ফিরেছিলেন। সবসময় উদ্ভাবনী চিন্তায় নিবিষ্ট থাকায় বিয়ের কথা ভাবতে পারেননি ফাহিম। অর্থাৎ এই ৩৩ বছর বয়সেই নিজের উদ্ভাবিত মডেলের প্রচলন ঘটিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থের মালিক হয়েছিলেন ফাহিম।
‘সম্ভবত: এটাই কাল হয়েছিল উদিয়মান এই টেকনোলাজি জায়েন্টের। ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ ফাহিমের এই এগিয়ে চলা সহ্য করতে পারছিলেন না’-এমন মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী। তারা মনে করছেন, সাদা-মাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ফাহিম কখনোই কারো সাথে রেগে কথা বলেননি। রাগ করার সময়ই ছিল না তার। সবসময় নিজের মধ্যে নিবিষ্ট থাকতেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের নেশায়।
ফাহিমের বন্ধু ও ব্যবসায়ীক পার্টনার আহমেদ ফাহাদ তার সম্পর্কে বলেছেন, তিনি ছিলেন সুন্দর ভবিষ্যত রচনায় রোল মডেল, যা ভালো মনে করতেন তা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা সংশয়ে থাকতেন না। তার সাহচর্যে যারাই এসেছেন তারাই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন জীবন-যুদ্ধে। ফাহিমের পেশাদার ঘাতক সোমবার বিকেলে ইলেভেটর দিয়ে ফাহিমের সাথেই সপ্তম তলায় উঠে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লোকটি কালো পোশাক পরিহিত ছিল। মাথায় টুপি, মাস্ক-সবকিছু ছিল কালো। হাতে ছিল বড় একটি স্যুটকেস। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ফাহিমকে হয়তো মাথায় আঘাত করে দুর্বল করা হতে পারে। এরপরই বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গলাকাটা হয়। দু’হাত ও দু’পা কাটা হয়। বুকের মধ্যেখানেও করাত চালিয়ে দু’ভাগ করা হয়। এরপর খণ্ড খণ্ড অংশ আলাদা পলিথিন ব্যাগে ভরা হয়। ফ্লোরের রক্ত মুছে ফেলা হয় কৌশলে। করাতেও ছিল না রক্তের দাগ। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, ফাহিমকে হত্যার পর টুকরো টুকরো লাশ ঐ স্যুটকেসে ভরে কোথাও নেয়া হতো-যাতে ফাহিম নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনেও অনেক সময় পেড়িয়ে যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা এবং এমন হত্যাকাণ্ডের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণকারীরা আরো মনে করছেন, খণ্ড খণ্ড লাশ স্যুটকেসে ভরার আগেই হয়তো ঐ এপার্টমেন্টে আসতে আগ্রহী কেউ নীচে থেকে কলিং বেল টিপেছিলেন। সে শব্দেই ঘাতক সবকিছু ফেলে পালিয়েছে। এমন ভাবনার সারাংশ টেনে ফাহিমের অভিভাবকরা বলেছেন, ঘাতক কীভাবে ভবন থেকে পালালো-সেটিও জানতে হবে। কারণ, সে তো হাওয়া হয়ে যায়নি। যে পথে ঢুকেছিল-সেই পথেও বেড়িয়ে গেছে-সে দৃশ্য ফুটেজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন-এমন প্রশ্ন ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.