লিড নিউজশিক্ষা

ভিকারুননিসায় জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রচার প্রচারণা!

এবিএনএ: রাজধানীর আকাশে ঘন মেঘের আনাগোনা। দু’দিন ধরেই হচ্ছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। এমন বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও বেইলি রোড সরগরম। এখানে বইছে নির্বাচনের আমেজ। পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাস্তাঘাট। বেইলি রোডের মতোই নির্বাচনের পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব হয়ে গেছে আজিমপুর, ধানমন্ডি আর বসুন্ধরা এলাকার অলিগলি। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনাও অবাক করার মতো। সবমিলিয়ে মনে হবে যেন বড় কোনও নির্বাচন হতে চলেছে। এমনকি প্রার্থীদের জামানতের টাকা ছাড়িয়ে গেছে জাতীয় নির্বাচনকেও।এ নির্বাচন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভনিং বডির প্রতিনিধি বাছাইয়ের। আগামীকাল শুক্রবার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বেইলি রোডসহ ভিকারুননিসার চার শাখায় একযোগে ২৪ হাজার ভোটার তাদের প্রতিনিধি বাছাই করবেন।

সভাপতিসহ ১১ সদস্যের গভর্নিং বডিতে থাকবেন চার শিক্ষকসহ ছয় জন অভিভাবক। তবে শিক্ষকদের তেমন প্রভাব দেখা না গেলেও ৬ জন অভিভাবক প্রতিনিধির বিপরিতে লড়ছেন ২৭ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রত্যেককে মনোনয়নপত্র পেতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়েছে ৩০ হাজার করে টাকা। যা জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও বেশি।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বেইলি রোড এলাকায় দেখা গেছে, পোষ্টার-ফেস্টুন থেকে রেহাই পায়নি রাস্তা-ঘাট, গাছ-পালা। আচরণবিধির লঙ্ঘন করে স্কুলের দেয়ালেও টানানো হয়েছে বড় বড় রঙ্গিন ব্যানার। পুরো বেইলি রোড, রমনা মসজিদ মার্কেট সড়ক, সার্কিট হাউজ রোড, মালিবাগ রোড ও মগবাজার পর্যন্ত ব্যানারে-পোস্টারে ঢাকা। এস ব্যানার-পোস্টারে লেখা হয়েছে হরেক রকম প্রতিশ্রুতি। নতুন কমিটিতে যাতে ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য না হয় সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্বাচিত হলে স্কুলে লেখাপড়ার মান উন্নয়নে কাজ করারও আশ্বাসবাণী দেখা গেছে সেসব ব্যানার- পোস্টারে।

বেইলি রোড শাখার আশেপাশের সড়কগুলোতে ছোট ছোট দলে মানুষের জটলা। সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এই স্কুলের গভর্নিং বডি থাকা না থাকা এমনকি তাদের কাজ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে সাধারণ অভিভাবকদের। তাদের ভাষ্য, ভিকারুননিসা স্কুলের অভিভাবকদের স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য গভর্নিং বডিতে প্রতিনিধির দরকার পড়ে না।

জয়নুল আবেদিন নামের এক অভিভাবক জানান, যারা কাজ করবেন তাদেরকেই তিনি ভোট দেবেন। তবে নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়িতে বিরক্ত অনেক অভিভাবকও। নির্বাচনী প্রচারণায় বাড়াবাড়ির বিষয়ে বিরক্তি দেখিয়ে এক অভিভাবক বলেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে পোস্টারের জন্য হাঁটা যাবে না, চলা যাবে না, হাজারটা করে প্রার্থীরা ফোন করবেন, এটা তো খুবই বিশ্রি ব্যাপার।’

বেইলি রোডে কথা হয় মহিলা সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী জেসমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনে জয়ী হলে আমার সর্বোচ্চ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে যাব। যেহেতু আমি নিজে একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক অতীতে কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেগুলো কাছ থেকে দেখিছি। সেসব সমস্যা সমাধানে আমি কাজ করব যদি যদি অভিবাবকরা আমাকে ভোট দেন।’

দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যার কারণে এই নির্বাচন গত নির্বাচনগুলোর চেয়ে আলাদা। আর এটা স্কুলের স্বার্থেও বেশ গুরত্ব বহন করছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কাও রয়েছে কিছুটা। রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তিসহ বিভিন্ন কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। গত ১৫ সেপ্টেস্বর রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া রেজওয়ানকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button