জাতীয়বাংলাদেশ

পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ বাতিলের পরামর্শ

এ বি এন এ : পাবলিক পরীক্ষা থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা। এছাড়াও সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতেও বলেছেন তারা।

 

শিক্ষাবিদরা নোট-গাইড, কোচিং-প্রাইভেট নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদেরা এসব পরামর্শ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এমসিকিউ প্রশ্নের পরীক্ষা নিয়ে নানা কথা ওঠায় ইতিমধ্যে ১০ নম্বর করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন যেহেতু পরামর্শ এসেছে এটা নিয়েও ভাবা হবে। তিনি আরও বলেন, এমসিকিউ বাদ দিয়ে যদি ছোট প্রশ্ন আকারে উত্তরে কিছুটা হলেও লিখতে হবে এমন করা যায়, তাহলে সেটাও আমরা ভাবতে পারি। সভায় পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ প্রশ্ন শূন্যে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের ব্যবসা এখন রমরমা।

 

যদি গাইডবই পড়তে হয়, তাহলে পাঠ্যবইয়ের দরকার কী? তিনি পাবলিক পরীক্ষা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শেষ করার পরামর্শ দেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’র প্রস্তাবক ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শিক্ষকেরাই সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারছেন না। না পেরে তারা গাইডবই অনুসরণ করছেন। তিনি এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বও ১৫ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিপুল পাশ সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। মানুষের আস্থা কমে গেছে। স্কুলের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরাও শিক্ষকের মত হয়ে যাচ্ছেন। তারা সন্তানদের প্রাইভেট টিউটরের কাছে পাঠাচ্ছেন, নোট-গাইডও কিনে দিচ্ছেন বলে উদ্বেগ জানান তিনি।

 

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ গাইড নির্ভরতা কমাতে তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও তা সব শিক্ষকের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়ার পরামর্শ দেন। অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বাজেটে শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দের পরামর্শ দিয়ে বলেন, সমস্যা যদিও অর্থে নয়, শিক্ষা প্রশাসনে। তিনি বলেন, কারো কারো শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টা অব্যাহত আছে। শিক্ষা আইন করলে এটা দূর হবে। স্কুলের কমিটি কাজ করে না বলেও তিনি মনে করেন। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বিজ্ঞানের বই আমি নিজেই বুঝি না। তাহলে শিশুরা কেমনে বুঝবে। বই এমনভাবে লেখা উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের বাইরের বই পড়তে না হয়। শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে না হয়। এজন্য প্রয়োজনে এ খাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া উচিত।

 

বিজ্ঞানে ব্যবহারিকে ২৫ এর মধ্যে ২৫ নম্বর পাওয়ার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এটা কেমনে সম্ভব? এটা কি সত্যিকারভাবে পায়? সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের গোড়ায়ই গলদ রয়ে গেছে। এটা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিকের পর ছেলেরা শিক্ষায় থাকছে না। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতায় যারা আসেন তাদের বেশির অন্য চাকরি না পেয়ে এসেছেন। ক্লাসে তারা শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ দেন না। তারা শিশু ও কিশোরের মনস্তত্ব বোঝেন না। অনেকে ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংয়ে আকৃষ্ট করেন। সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। এখন পঞ্চমের মতো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করতে হবে। তিনিও এমসিকিউ তুলে দেয়ার পরামর্শ দেন।

 

মতবিনিময়ের অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, শিক্ষক শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button