আমেরিকালিড নিউজ

নিহত সেনাদের নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে তোলপাড় মার্কিন মুলুক

এবিএনএ : যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ‘লুজার’ এবং ‘সাকারস’ বলে অভিহিত করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেননি বলে দাবি করছেন নিজে ও তার মিত্ররা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের নিয়ে উপহাস করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তিনি ওইসব সেনাদের কর্মকান্ডকে ‘লুজারস’ এবং ‘সাকারস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে তার।

ট্রাম্পের এমন মন্তব্য নিয়ে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে আটলান্টিক ম্যাগাজিন। পরে তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা এপি এবং ফক্স নিউজ। এ রিপোর্ট প্রকাশ পওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন বর্ষীয়ান যোদ্ধাদের গ্রুপগুলো। এর মধ্যে প্রগ্রেসিভ গ্রুপ ভোটভেটস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখানো হয়েছে, যেসব পরিবারের সন্তান যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাদেরকে। তাদের একজন বলছেন, আপনি জানেন না। এই ত্যাগের মূল্য কি। ইরাক আফগানিস্তান ভ্যাটেরানস অব আমেরিকা গ্রুপের পল রিকহোফ টুইটারে লিখেছেন, এমন বক্তব্যে কে না বিস্মিত হবেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন মন্তব্য আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার বড় ক্ষতি করবে। কারণ, নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও তাদের পরিবারবর্গের সমর্থন তার জন্য খুব প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে তিনি পেরেক মেরে দিয়েছেন।

আটলান্টিক ম্যাগাজিনের মতে, ২০১৮ সালে প্যারিসের বাইরে একটি মার্কিন সমাধিক্ষেত্র সফর বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ওই সমাধিক্ষেত্রে ‘লুজারদের’ (মৃতদেহ) দিয়ে পূর্ণ। চারটি সূত্র ওই ম্যাগাজিনকে বলেছেন, সমাধিক্ষেত্র সফর বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। কারণ, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল এবং এই বৃষ্টিতে তার কেশবিন্যাস নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশংকা ছিল তার। তার চুলের চেয়ে মার্কিন যোদ্ধাদের সম্মানকে তিনি গুরুত্ব দেয়ায় বিশ্বাস করেন নি।

একই সফরের সময় প্রেসিডেন্ট বেলেউ উডে নিহত ১৮০০ মার্কিন সেনাকে ‘সাকারস’ বলে অভিহিত করেন বলে জানানো হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্যারিসের দিকে জার্মানির অগ্রঅভিযান প্রতিরোধে এই যুদ্ধ সহায়ক হয়েছিল। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রােেম্পর সফর বাতিল নিয়ে ২০১৮ সালে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছিল, খারাপ আবহাওয়ার কারণে ওই সফর বাতিল করা হয়েছিল। এ জন্যই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বহন করার জন্য যে হেলিকপ্টার ছিল, তা ওড়েনি। এই বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়েছে সম্প্রতি একটি বইয়ে। এই বইয়ের লেখক ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের কড়া সমালোচক এই বল্টন। আটলান্টিক তার রিপোর্টের সূত্রের নাম প্রকাশ করেনি। তবে বার্তা সংস্থা এপি দাবি করেছে, তারা নিরপেক্ষভাবে ট্রাম্পের এমন অনেক বক্তব্য নিশ্চিত হতে পেরেছে। ফক্স নিউজের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, এমন কিছু বক্তব্য সংশোধন করেছিলেন তিনি।

প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের কারণে তাকে প্রেসিডেন্ট পদে আনফিট বা অযোগ্য বলে দাবি করেছেন নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রার্থী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ওই খবর যদি সত্য হয়, দৃশ্যত এটাকে সত্য বলেই মনে হচ্ছে, তাহলে তা চরমভাবে নিন্দার বিষয়। এটা ভয়াবহ হতাশার বিষয়।

ইরাক যুদ্ধের সময় দু’পা হারিয়েছেন ডেমোক্রেট সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ। তিনি বলেছেন, নিজের অহমিকা প্রকাশ করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইরাক যুদ্ধে নিহত এক যোদ্ধার পিতা, বহুল আলোচিত খিজর খান ২০১৬ সালে ডেমোক্রেট দলের কনভেনশনে যোগ দিয়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তিনিও মিস ডাকওয়ার্থের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। খিজর খান বলেছেন, যখন দেশের জন্য জীবন দানকারীদের ‘লুজার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তখন তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা অনুধাবন করতে পারি।

কি বলছেন ট্রাম্প
এমন রিপোর্টের বিরুদ্ধে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি এসব রিপোর্টকে ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবর বলে আখ্যায়িত করেছেন। যে সূত্রকে উদ্ধৃত করে এসব রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, এসব কাহিনীর নেপথ্যে রয়েছেন তার হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলি। ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি ফক্স নিউজকে শুক্রবার সকালে বলেছেন, ফ্রান্স সফরের সময় তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন। তাকে ওই রকম কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে কখনো শোনেননি তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার বলেছেন, দেশের সেনাবাহিনী, অবসরপ্রাপ্ত যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। তবে রিপোর্টের বিষয় প্রত্যাখ্যান করেন নি এই কর্মকর্তা। এই রিপোর্টকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ অব স্টাফ মাইক মুলভানি, সাবেক প্রেস সেক্রেটারি সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স প্রমুখ।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button