আমেরিকা

ট্রাম্পকে হারাতে ১০ কাজ হিলারির

এ বি এন এ : যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে সাবলীল রাজনৈতিক কর্মসূচি বলছেন বিশ্লেষকরা। ফিলাডেলফিয়ায় এই কনভেনশনে বক্তব্যের ফল্গুধারা যেমন ছুটেছে, বয়েছে অশ্রুধারাও। পপস্টাররা যেমন মঞ্চ মাতিয়েছেন, তেমন আনন্দে মেতেছেন ভোটার-সমর্থকরাও। আর এ সবের মধ্য দিয়ে সকলের মধ্যে একটাই প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতেই হবে।

গেলো সপ্তাহে ক্লেভল্যান্ডে রিপাবলিকানদের কনভেনশনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার গোঁড়ামির প্রকাশটাই বেশি ঘটিয়েছেন। এখনো যারা সংশয়ে, সেই ভোটারদের ধরার জন্য তার চেষ্টা ছিলো সামান্যই। আর ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে  টিম ক্লিনটন সাধারণ নির্বাচনের ধ্রুপদী রূপটিকেই সামনে তুলে এনেছে।

তবে কনভেনশন সেতো প্রক্রিয়ার শুরু মাত্র। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, আর ক্ষণে ক্ষণে নিউজ আপডেটের যুগে, একেকটি ধারণার মেয়াদ একেকটি টুইটের মেয়াদের সমান।

সত্যিকারের প্রচারাভিযান এখান থেকেই শুরু। সুতরাং হাঁটতে হবে আরও বন্ধুর পথ, অনেকটা দূর পর্যন্ত।

যেজন্য ট্রাম্পকে হারাতে হিলারি ক্লিনটনকে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। করতে হবে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ। অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট এখনও এবারের লড়াইকে একটু জটিল বলেই মনে করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাই হিলারিকে বেশ কিছু টিপসও দিচ্ছেন। তার অন্যতম হচ্ছে-

মিডিয়ার ওপর নির্ভরতা নয়
মনে রাখতে হবে টেলিভিশনসহ সকল মূল ধারার সংবাদমাধ্যমেরই নিজস্ব এজেন্ডা আর মুনাফার ভাবনা রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা যা করতে পারবে, কোনো মিডিয়াই তা করে দেবে না। মিডিয়া এখন অনেক কিছুই করবে, নিরপেক্ষতার নামে তা হবে। কোনো কোনো মিডিয়া হয়তো ট্রাম্পের জন্য কিছু করতে চাইবে না, কিন্তু তিনি একইসঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থীও বটে, ফলে তার কাভারেজেও গুরুত্ব কম থাকবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, টিম হিলারিকে সেজন্য মিডিয়ার সবচেয়ে খারাপ ভূমিকাটিই মেনে নেওয়ার মনোভাব রাখতে হবে।

বার্নির সমর্থকগোষ্ঠীকে সাবধানে ধৈর্যের সঙ্গে হ্যান্ডল করতে হবে
জরিপগুলো দেখাচ্ছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সের অধিকাংশ সমর্থকই ক্লিনটনকে সমর্থন জানাবেন। বার্নিও তার অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে অনুসারীদের প্রতি হিলারিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে গেলে চলবে না। প্রতিটি ভোটের জন্যই কাজ করতে হবে টিম হিলারিকে।

সামাজিক মাধ্যমের সুবিধা নিতে হবে
টেলিভিশনের চেয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনেক বেশি প্রভাবশালী। এটাই যেন এখন হার-জিতের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বারাক ওবামার কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি যখন এগিয়েছেন, এগিয়েছে ফেসবুকও। বলা যায়, তাদের ক্যারিয়ার প্রায় সমান সময়ে শুরু। ওবামার প্রায় দুই কোটি ফলোয়ার ছিল (এখন প্রায় ৫ কোটি) প্রচারণার সময়। সেখানে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন সমানে। যেটা অন্য প্রচারণার সঙ্গে বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করে তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো করতে হবে হিলারিকে। টুইটার-ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে তার স্লোগান-পরিকল্পনা জানিয়ে দিতে হবে সমর্থকদের। কর্মসূচির জন্য বসে না থেকে তৎক্ষণাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ধরিয়ে দিতে হবে ট্রাম্পের ভুল।

অর্থনীতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য বিষয়েও মনোনিবেশ
১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট পদে বিল ক্লিনটনের প্রচারণার সময়কার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্লোগানই ব্যবহার হয়ে আসছে নির্বাচনে। এবারও তাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা, সন্ত্রাস, অপরাধ ও নীতিগত বিভিন্ন বিষয় সংবাদে আধিপত্য বিস্তার করা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে জোর দিচ্ছেন উভয় প্রার্থী। এক্ষেত্রে হিলারিকে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবাদে প্রভাব বিস্তারকারী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।

জিততে হবে ওহাইও-পেনসিলভানিয়াতে
এই দুই রাজ্যে জয় ছাড়া ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি জিততে পারবেন না। এটা এ কারণে বলা হচ্ছে যে, এর আগেও কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী এ দুই রাজ্যে জয় ছাড়া প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। সুতরাং এ দু’টি রাজ্য দখলে রাখতে হবে হিলারিকে।  এ কারণেই টিম হিলারির কনভেনশন পরবর্তী প্রচারণার বাস এ দুই রাজ্যে বাতাস দিয়ে যাবে বলে জানাচ্ছে সূত্র।

জিততে হবে রিপাবলিকানমুখী শহরতলীতে
এই ভোটে হিলারিকে জিততে হলে তাকে পেতে হবে শহরতলীর রিপাবলিকানমুখী ‘স্বাধীন’ কলেজপড়ুয়া ভোটারদের সমর্থনও। ওহাইও-পেনসিলভানিয়ার মতোই এই ভোটাররা ফিলাডেলফিয়া, ক্লেভেল্যান্ড, কলম্বাস, চিনচিন্নাতি ও পিটসবার্গের ভোটক্ষেত্রের প্রাণভোমরা।

জোর দিতে হবে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটে
আফ্রো-আমেরিকান ভোটাররা এরইমধ্যে হিলারি ক্লিনটনের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন জোরালোভাবে। কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এ বিষয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করেছেন। যেটা আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে বিরলতম এনডোর্সমেন্ট বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে নিশ্চিন্ত না থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের জন্যও খাটুনি করতে হবে হিলারিকে।

হিস্পানিক ভোট জয়ে কাজ করতে হবে
হিলারির লক্ষ্য হতে হবে লাতিন বা হিস্পানিক ভোট অন্তত ৭০ শতাংশ ঝুলিতে রাখা। অর্থাৎ এ ভোটের হিসাবে ট্রাম্পকে ৩০ শতাংশের নিচে রাখতে হবে। সেজন্য অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী সিনেটর টিম কেইন বিশেষভাবে কাজ করছেন। কেইনের সঙ্গে এ বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে হিলারিকেও।

ব্লু-কলার ভোটারদের ‘ট্রাম্প’ ধরতে হবে
ক্লিনটন কখনো প্রাইভেট খাতে কাজ করেননি, কেউ সেটা বলেওনি। কিন্তু ট্রাম্প ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী হিসেবে তার ঋণশোধের স্বেচ্ছাচারিতা, অনৈতিক সিদ্ধান্ত-চুক্তি, ভুয়া ‍মামলা, জালিয়াতি ও ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকার হয়েছেন যে ব্লু-কলার ভোটাররা (শ্রমজীবী ভোটার), তাদের তথ্যউপাত্ত কাজে লাগাতে পারেন হিলারি। এ সুবিধা তাকে নিতে হবে।

ট্রাম্প নিচ দিয়ে গেলে হিলারিকে যেতে হবে ওপর দিয়ে
ট্রাম্প যে পথে হাঁটবেন, অবশ্যই সে পথে হাঁটা যাবে না হিলারিকে। অর্থাৎ ট্রাম্প যদি নিচ দিয়ে যান, হিলারিকে যেতে হবে ওপর দিয়ে। প্রচারণা, ভোট কামনা, প্রতিশ্রুতি দেওয়াসহ সবক্ষেত্রেই হিলারিকে স্বতন্ত্রভাবে এগোতে হবে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button