এবিএনএ : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’ ভোলেনি বাঙালি জাতি। একুশে ফেব্রুয়ারি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষাসৈনিকের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালির শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বশরীরে উপস্থিত হননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় নেপথ্যে বাজছিল অমর একুশের কালজয়ী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’।
সশরীরে উপস্থিত থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমডোর এম এম নাঈম রহমান। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্বদানকারীদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামও ফুল দেয় প্রথম প্রহরে। শহিদ মিনারে একে একে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহিদ মিনারের বেদি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই শহিদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সর্বস্তরের মানুষ পলাশী হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহিদ মিনারে প্রবেশ করে ভাষাশহিদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ছিল কঠোর নিরাপত্তা।
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। তাদের পক্ষে পৃথক শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহিদ দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারছেন। শহিদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হয়েছে। মাস্ক না পরে কাউকেই শহিদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার, অন্যদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে জীবনকে বাজি রাখা যে পণ করেছিল সেদিন তরুণরা, তা বাঙালি জাতিকে বিশ্বের কাছে নতুন মর্যাদা দান করেছে। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কাছে, অধিকার আদায়ের আন্দোলনের যে নিদর্শন স্থাপন করেছিল—সেই দিনটি আজ বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বিশ্বের সব জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে ১৯৫২ সালের বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের দিন সেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে।
কর্মসূচি :২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এ দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :দলটির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালোব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহিদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামীকাল সোমবার বিকাল ৪টায় বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকালে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
জেপির বিবৃতি ও কর্মসূচি :জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম ভাষাশহিদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন ছিল, বাঙালি জাতিয়তাবাদী আন্দোলন ও বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ে সুদীর্ঘ সংগ্রামের প্রথম পদক্ষেপ। একুশের মহান পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা আজ স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। অমর একুশে তাই আমাদের আত্মপরিচয়ের বাহন এবং জাতিসত্তা উন্মোচনের মহান লগ্ন। আমরা এই পবিত্র দিনে আমাদের জাতিকে আরো উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে শহিদদের আত্মাকে শান্তি দেওয়ার শপথ গ্রহণ করব।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দলটির পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ৬টায় জেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় আজিমপুরস্থ ভাষাশহিদদের মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম দিবসের কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.