এবিএনএ: ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এখন র্যাবের রিমান্ডে। অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলায় বুধবার দিনভর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় সম্রাট চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্রাট ডিবিকে বলেছেন, ক্যাসিনোর টাকার ভাগ তো অনেকেই পেয়েছেন। শুধু তাকে কেন দায়ী করা হচ্ছে? তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? অন্যদের কেন নয়? এদিকে সম্রাটের মামলা দুটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলা তদন্ত করছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে মামলা দুটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন। পরে বুধবার তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রিমান্ড মঞ্জুরের পর সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে প্রথমে ডিবি হেফাজতে রাখা রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ক্যাসিনো বাণিজ্য, অবৈধ মার্কেট, দোকান, ফুটপাত, মাদক ব্যবসার কমিশনসহ বিভিন্ন খাত থেকে উপার্জিত টাকা কোথায় রাখা হয়েছে? দল ও দলের বাইরে আড়ালে থেকে এসব অপকর্মে কারা সহযোগিতা করতেন? কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশন দখল এবং সেখানে কারা যাওয়া-আসা করতেন, ক্যাসিনো ও টেন্ডার সিন্ডিকেটে কারা রয়েছেন- এসব বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু ডিবির অনেক প্রশ্নের জবাব দেননি সম্রাট।
উল্টো ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন- শুধু আমি একা কেন? ক্যাসিনোর টাকা তো অনেকেই পেয়েছেন। তারা কেন বহাল তবিয়তে? মঙ্গলবার অস্ত্র ও মাদকের দুটি মামলায় সম্রাটকে ৫ দিন করে ১০ দিন এবং তার সহযোগী আরমানকে মাদক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত আলাদাভাবে সম্রাট ও আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে ডিবি সূত্রে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যুবলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাসিনো থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা নিতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও সম্রাটের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র্যাব। তাদের আজ (বুধবার) রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি থেকে র্যাব হেফাজতে নেয়া হবে। এরপর দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদসহ বিস্তারিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে ডিবি সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনো, মাদক, অবৈধ মার্কেট-দোকান থেকে মাসে সম্রাটের একশ’ কোটি টাকার বেশি আদায় হতো। ভাগবাটোয়ারা শেষেও বিপুল টাকা থাকত তার। এসব বিষয়ে সম্রাটকে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তিনি মুখ খোলেননি। কোন দেশে কত টাকা রেখেছেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি সম্রাট। বারবার এক কথাই বলছেন, তার কাছে টাকা নেই।
ডিবি সূত্র জানায়, উপার্জিত অর্থের উৎস এবং তার সঙ্গে পর্দার আড়ালে থেকে যারা ভাগ নিতেন, সহযোগিতা করতেন তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সম্রাট একেক বার একেক তথ্য দেন। প্রায়ই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। নীরবতা পালন করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উপাজির্ত অর্থ দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন বলে জানান সম্রাট। তিনি সুবিধাভোগী একাধিক সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও অস্ত্র প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আরমানকে দিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ করেছিলেন সম্রাট। বড় ভাইদের সৌজন্যে প্রায়ই বিভিন্ন পার্টি আয়োজন করা হতো। এসব পার্টিতে নায়িকা মডেলদের আমন্ত্রণ করতেন আরমান।
আরমান নিজেও সিনেমা তৈরি ও পরিচালনায় যুক্ত হন সম্রাটের পরামর্শেই। কালো টাকা সাদা করার জন্য এই ব্যবসাকে সুবিধাজনক মনে হতো সম্রাটের। ক্যাসিনো ব্যবসাসহ সম্রাটের সকল অপকর্মে মানিক-জোড়ের মতো সঙ্গে ছিলেন আরমান। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছে, ক্যাসিনো তার পুরনো অভ্যাস। এই অভ্যাসই তাকে এখন ভোগাচ্ছে। ডিবি সূত্র জানায়, সম্রাট ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করার আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের এক নেতা হোটেল স্যারিনায় ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। তাকে দেখেই সম্রাট তার সঙ্গীদের নিয়ে এ ব্যবসা চালু করেন।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, অভিযানের সময় সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত একটা নথি পাওয়া যায়। তবে টাকা কোথায় রাখতেন, এর প্রমাণ মেলেনি। সম্রাটকে র্যাব হেফাজতে নেয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, জি কে শামীম, খালেদ ও অন্য সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে দেশের বাইরে সম্রাট ও খালেদের বেশি সম্পদ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে তাদের কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ ও ব্যবসা আছে। মালয়েশিয়ার আমপাংয়ের তেয়ারাকুন্ডে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে সম্রাটের। সেই সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকেও তার অ্যাকাউন্ট আছে। এসব অ্যাকাউন্টে নিয়মিত লেনদেন হওয়ার তথ্য এসেছে র্যাব ও গোয়েন্দাদের হাতে। রিমান্ডে এসব বিষয় বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সম্রাটকে। এদিকে পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে সম্রাট ও তার সহযোগীদের সম্পদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
কয়েকটি টিম ওইসব দেশ ঘুরেও এসেছে। ওইসব দেশে সম্রাট, খালেদ, জি কে শামীমসহ অন্য সহযোগীদের ব্যবসার পাশাপাশি ফ্ল্যাট-বাড়ি আছে। ওইসব সম্পদ তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে উদ্ধার করতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে একাধিক সংস্থা কাজ শুরু করে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে, ব্যাংকক ও মালয়েশিয়ায় তাদের তিনটি হোটেল ও তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। দুবাইয়ে সম্রাট, শামীম ও খালেদের মোটর পার্টস ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, শামীম ও খালেদ রিমান্ডে থাকার সময় তাদের পাশাপাশি সম্রাটের সম্পদের ব্যাপারেও বিশদ তথ্য দিয়েছেন। তারা বিদেশে অর্থ পাচার করার কথাও স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র্যা ব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে। দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র্যাব। ৬ অক্টোবর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্ব একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে। এদিন নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এর পর সম্রাটকে কারাগারে পাঠানো হয়।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.