জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

কুড়িগ্রামে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি, ৬ জনের মৃত্যু

এবিএনএ : কুড়িগ্রামে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার বিকেলে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের কাঠালবাড়ী, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কমন্ডল এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপধারণ করেছে। বিভিন্নস্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় এবং এর উপর পানি ওঠায় জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

৯ উপজেলার ৫৭ ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বন্যায় ৬ জনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

সদরের কাউয়াহাগা এলাকায় বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ায় সকাল থেকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম মাঠে নেমেছে।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের সভাপতিত্বে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলার সরকারি ও বেসরকারি সকল বিভাগকে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম বাঁধ সংস্কারের কর্ম-পরিকল্পনা ও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে মাঠে কাজ শুরু করেছে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৪ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদরের খামার হলোখানা এলাকার অলিউর রহমানের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম (২৫) সাপের কামড়ে, পৌরসভার ভেলাকোপা এলাকার দুলু মিয়ার ছেলে বাবু (দেড় বছর) পানিতে ডুবে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের প্রাণকৃঞ্চ গ্রামের খাতক মামুদের ছেলে লুৎফর রহমান (৩৫) মাছ মারতে গিয়ে পানিতে ডুবে এবং গোড়কমন্ডল গ্রামের মৃত কাচু মামুদের ছেলে হযরত আলী (৫৫) আকস্মিক ঘরে পানি ঢোকায় আতঙ্কে মারা যায়।

রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাদেকুল হক নুরু জানান, কালুয়ারচর ওয়াপদা বাঁধ রাতে ভেঙে যাওয়ার সময় রিফাত (১০) ও লোকমানের স্ত্রী (৩২) পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্রনাথ উঁরাও জানান, ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার সংযোগ সকল সড়ক এখন পানির নিচে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে।

অন্যদিকে, রাজারহাট উপজেলার কালুয়ারচর ওয়াপদা বাঁধের ১শ মিটার এবং কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ীর বাংটুর ঘাট এলাকায় বাঁধের ১শ মিটার ভেঙে পানি ঢোকায় কাঠালবাড়ী, ছিনাই, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, হলোখানা ও রাজারহাট সদর প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম রংপুর মহাসড়কের একাধিক জায়গায় হাটু পারিমাণ পানি উঠায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ফুলবাড়ী-ভুরুঙ্গামারী উপজেলা সংযোগ সড়কের ৪ স্থানে ধরলা নদীর তীব্র স্রোতে ভেঙে যাওয়ায় এই তিন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বঙ্গবাসী জানান, বন্যায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ৫ হাজার পরিবার। ২৪ ঘণ্টায় ভিটেমাটি হারিয়ে গৃহহীন হয়েছে ৫৫টি পরিবার।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, আকস্মিক বন্যায় ৯ উপজেলায় ৪৪১টি বিদ্যালয় পানি উঠায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এরমাঝে ১৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে ১৮টি বিদ্যালয়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা মিলে জেলায় ১৬৭টি প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, জেলায় ৮৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ৫৭টি ইউনিয়ন। ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৭ জন। এছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button