কর্মসংস্থান সংকট মহামারীর মতো বিস্তার লাভ করছে: ড. হোসেন জিল্লুরের সতর্কবার্তা
ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগের অভাব ও মানসম্মত শিক্ষার সংকটকে কর্মসংস্থান ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন অর্থনীতিবিদরা।


এবিএনএ: বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তাঁর মতে, ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ খরা ও মানসম্মত শিক্ষার অভাব এ পরিস্থিতিকে মহামারীর মতো ছড়িয়ে দিয়েছে।
শনিবার আয়োজিত এক অনলাইন সংলাপে তিনি বলেন, শিক্ষা ও শিখন উভয় ক্ষেত্রেই দেশ পিছিয়ে পড়েছে, ফলে তরুণরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না।
পিপিআরসির গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ। কভিড-১৯, রাজনৈতিক স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতি ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ দারিদ্র্য বৃদ্ধির মূল কারণ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৫১ শতাংশ পরিবারে অন্তত একজন দীর্ঘস্থায়ী রোগী রয়েছেন, ৪০ শতাংশ মানুষ ক্রমাগত ঋণের বোঝা বইছেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, ৩৬ শতাংশ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে পারছে না। কর্মসংস্থান বিবেচনায় ৩৮ শতাংশ মানুষ বেকার এবং ৪৫ শতাংশ আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, দারিদ্র্যের হার সবসময়ই বেশি ছিল, কিন্তু কোনো সরকারই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁর মতে, অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই অন্তত ১৮-২৪ মাসের একটি শক্তিশালী কর্মসূচি নিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি তথাকথিত ‘চাকরিহীন প্রবৃদ্ধি’। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৩-২৪ শতাংশে আটকে আছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশেরও নিচে। এ হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অসম্ভব।
এছাড়া ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন সতর্ক করেন, নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বিশেষত শহরাঞ্চলে কমছে, যা শ্রমবাজারের জন্য উদ্বেগজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন কার্যকর অর্থনৈতিক সংস্কার ও মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
সংলাপে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা অংশ নিয়ে কর্মসংস্থান সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।