আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

করোনা থেকেও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে ব্রুসেলোসিস

এবিএনএ : সারা বিশ্বের নজর করোনাভাইরাসের দিকে। করোনার রেশ না কাটতেই আরেক নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব। ব্যাকটিরিয়াজনিত সংক্রামক ভাইরাস ক্রমশ ডানা বিস্তার শুরু করেছে। নতুন এই ভাইরাসটি নাম ব্রুসেলোসিস। অনেকেরই হয়তো জানা নেই করোনার থেকে অনেক বেশি ভয়ানক ব্রুসেলোসিস।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পৃথিবী আরও এক মহামারীর দিকে এগিয়ে যাবে। যদি একবার মহামারীর আকার নেয় তা হবে করোনাভাইরাসের থেকে কয়েক গুণ ভয়ানক। চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশে এই নতুন সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে। গোড়ায় সতর্ক না-হলে পরিণতি কী হতে পারে, করোনাভাইরাস সে শিক্ষা আমাদের দিয়েছি।

চীনের উহান আমাদের করোনাভাইরাস দিয়েছে। চীনের সীমানা ছাড়িয়ে করোনা যে বহির্বিশ্বে কতটা ভয়ংকর প্রাণঘাতী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ব্রুসেলোসিস ব্যাকটেরিয়াও কিন্তু চীনে সদ্য সদ্য ধরা পড়েছে। উত্তরপশ্চিম চীনে নতুন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কয়েক হাজার চীনার টেস্ট রিপোর্ট এরই মধ্যে পজিটিভ এসেছে।

চীনের গানসু প্রদেশের রাজধানী শহর লানজুর জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৩,২৪৫ জন ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পজিটিভ এসেছে আরও ১,৪০১ জনের রিপোর্ট। তবে, সৌভাগ্যবশত চিনে এখনও পর্যন্ত একজনও কেউ এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা যাননি। শুধু চীনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকলে, তা-ও না হয় কিছুদিনের জন্য স্বস্তির শ্বাস ফেলা যেত। সূত্রের খবর, ভারতেও এই নতুন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এরই মধ্যে ধরা পড়েছে। মানুষের পাশাপাশি পশুদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ে।

ব্রুসেলা জেনাসের অন্তর্ভুক্ত একদল ব্যাকটেরিয়াই ব্রুসেলোসিসের কারণ। মানুষ থেকে পশু– কাউকেই ছাড়ে না এই ব্যাকটেরিয়া। আক্রান্ত পশুর ফ্লুইড থেকেই সরাসরি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া। আনপাস্তুরাইজড ডেয়ারি পণ্য, দূষিত বায়ু থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বিরল। দূষিত খাবার থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে এমন জায়গায় শ্বাসপ্রশ্বাস—সব জায়গায় সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সন্তানকে ব্রেস্টফিডিং এমনকী যৌন সম্পর্ক থেকেও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেটে-ছড়ে গেলেও সেখান থেকে এই নতুন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।

ঝংমু লানজুর বায়োলজিক্যাল ওষুধ কারখানা থেকেই চীনে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক একটা ধারণা রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি ভেড়া, গরু, ছাগল, শুয়োর, কুকুর আক্রান্ত হতে পারে।

শরীরে উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে সংক্রমণ হওয়ার পর কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। জ্বর, গাঁটে ব্যথা, দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, মাথাব্যথা, ঘাম হল এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গ। করোনাভাইরাস ও ফ্লুয়ের উপসর্গের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। আবার স্পনডিলাইটিস, আর্থরাইটিস, অণ্ডকোষের ফোলাভাবের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

করোনাভাইরাসের কোনও চিকিত্‍‌সা না-থাকলেও ব্রুসেলোসিসের চিকিত্‍‌সায় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। তবে করোনার মতো এরও কোনও ভ্যাকসিন নেই। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিত্‍‌সা করা যাবে। সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তার পরেও ফিরে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার সেরা উপায় হল, কাঁচা ডেয়ার পণ্য থেকে দূরে থাকা। পশুদের নিয়ে কাজ করলে সাবধানে থাকতে হবে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button