এ বি এন এ : কালো টি শার্ট পরা ছেলেটির পিঠে ছিল একটা লাল রঙা রুকস্যাক। ৩০০ রাউন্ড গুলির সঙ্গে তাতে ছিল একটা বইও। নাম 'হোয়াই কিডস কিল: ইনসাইড দ্য মাইন্ডস অব স্কুল শ্যুটারস'। লেখক পিটার ল্যাঙ্গম্যানের এই বইটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছিল ছেলেটা। গবেষণা করেছিল বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা স্কুলে বন্দুকবাজদের হামলার ঘটনা নিয়েও। কারণ? ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গুলি করে খুন করার মতো নৃশংস ঘটনা ভীষণ টানত তাকে। আর সম্ভবত সেই জন্যই ফেসবুকে এক নারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নিজ খরচায় খাওয়া-দাওয়ার জন্য শুক্রবার সে ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁয় ডেকেছিল অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েদের। টোপ দেওয়ার জন্য আবার লিখেছিল, ''আমি এমন কিছু দেব, যেটা তোমরা চাও।" আলি ডেভিড সনবোলি। ইরানি বংশোদ্ভূত এই জার্মান কিশোরই মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং মলে হামলা চালিয়ে মেরে ফেলেছে নয় জনকে। নিহতের মধ্যে সাত জনই কিশোর-কিশোরী বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহত ২৭ জনও বেশির ভাগ অল্প বয়সি। যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার ঘণ্টা খানেক পরে শহরেরই এক রাস্তায় মিলেছে বছর আঠারোর আলির নিথর দেহ। পুলিশের ধারণা, হামলা চালিয়ে ওই শপিং মল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে আত্মহত্যা করেছে সে। তবে তারা এ-ও জানিয়েছে ময়না-তদন্তের পরেই জানা যাবে, সে আত্মহত্যা করেছে, নাকি পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। ফ্রান্সের নিস, জার্মানির উয়েজবার্গের পরে মিউনিখ। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিন-তিনটা হামলা কাঁপিয়ে দিয়েছে ইউরোপকে। তবে আগের দুই ঘটনার সঙ্গে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোগ থাকলেও তৃতীয়টিতে এসে ধাক্কা খাচ্ছে পুলিশ। ধোঁয়াশা এতটাই যে শপিং মলের ওই বন্দুকবাজকে জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে পুলিশ। তবে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ। আর সেটা হলো, নরওয়ের হামলাকারী অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিকের বিশাল ভক্ত ছিল কিশোর আলি। তার হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার)-তেও রয়েছে ব্রেইভিকেরই ছবি। পাঁচ বছর আগের ২২ জুলাই নরওয়ের অসলোতে একা হামলা চালিয়ে সত্তরেরও বেশি মানুষকে মেরে ফেলেছিল দক্ষিণপন্থী এই জঙ্গি। আর সেই ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তির দিনটা হয়তো নিজের হামলার জন্য ইচ্ছে করেই বেছে নিয়েছিল আলি। মিউনিখ পুলিশের কর্তা হুবেরতাস আন্দ্রাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইএসের সঙ্গে আলির কোনও যোগসূত্র এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কাল ঘাতকের পরিচয় পাওয়ার পর পরই তার বাবা-মায়ের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। অলিম্পিয়া শপিং মল থেকে প্রায় দু’মাইল দূরের ওই ফ্ল্যাটে তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্কুলে ছোট ছোট শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনা নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেছিল আলি। তার কম্পিউটার ঘেঁটেও মিলেছে এই ধরনের বেশ কিছু গেমসের খোঁজ। জার্মানির মতো দেশে যেখানে কঠোর বন্দুক নীতি রয়েছে, সেখানে আলি কী করে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে ফেলল তার হদিস পাননি তদন্তকারীরা। সে একটি নাইন এমএম গ্লক পিস্তল নিয়ে শপিং মলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গেই আলির ব্যাগে ছিল প্রায় তিনশো রাউন্ড গুলি। আলির যে মানসিক চিকিৎসা চলছিল, তা-ও জানতে পেরেছে পুলিশ। হতাশায় ভুগত সে। জানা গেছে, রেস্তোরাঁয় ঢুকে গুলি চালানোর ঠিক আগের মুহূর্তে বিদেশিদের উদ্দেশে কটূক্তি করেছিল আলি। নিহতদের মধ্যে তিন জন কসোভো ও তিন জন তুরস্কের বাসিন্দা। তাই গোটা ঘটনার মূলে শরণার্থী সমস্যাও থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। প্রথমে তিন জন বন্দুকবাজের কথা বলা হলেও কাল রাতের দিকে পুলিশ জানায়, হামলাকারী এক জনই ছিল। আর তার মৃত্যু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে আরও যে দু’জনকে প্রায় পাগলের মতো ছুটতে দেখা গিয়েছিল, তারা সম্ভবত নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই দৌড়াচ্ছিলেন বলে পরে জানায় পুলিশ। তবে মিতভাষী, নাদুস-নুদুস আলি কী করে শপিং মলে গিয়ে এতগুলো লোককে মেরে ফেলল, তা ভাবতে পারছেন না তার পড়শিরা। আলির বাবা ট্যাক্সি চালান। মা একটি স্থানীয় শপিং মলে কাজ করেন। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজে কাগজ বিলির কাজও করত। আদ্যন্ত মধ্যবিত্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা সেই আলির ছবি আজকের খবরের কাগজে দেখে চমকে উঠেছেন মার্ক্সভরস্টাড এলাকার লোকজন। তবে তার স্কুলের সহপাঠীরা অবশ্য অন্য একটা ছবিও দেখিয়েছে। স্কুলে মাঝে মধ্যেই আলিকে নিয়ে মশকরা করা হতো বলে জানিয়েছে তারা। স্কুলে বিশেষ বন্ধুও ছিল না লাজুক স্বভাবের ওই কিশোরের। কোন হতাশা থেকে সে এই রাস্তা বেছে নিল, তার তল পাচ্ছে না পুলিশও। সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.