এবিএনএ: সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হচ্ছে। ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ নামক আত্মজীবনী গ্রন্থে এমন কিছু তথ্য ও মতামত প্রকাশ করা হয়েছে যা অনেককেই খেপিয়ে তোলা হয়েছে। ক্ষুব্ধ লোকজনের পক্ষ থেকেই মামলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-সম্পাদক নিজাম চৌধুরীর মার্কিন অ্যাটর্নি এই মামলার কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে ২৭ সেপ্টেম্বর জানা গেছে। নিউইয়র্ক সিটির বিখ্যাত একটি ল’ ফার্মের এক কর্মকর্তা (মামলা দায়ের হয়নি বলে নাম গোপন রাখা হলো) এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘মামলার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই ফেডারেল কোর্টে আবেদন করা হবে।’
এ মামলার গতি-প্রকৃতি নিয়ে মার্কিন অ্যাটর্নিদের সাথে ইতোমধ্যেই পরামর্শ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে। কী পরিমাণের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে, সেটি ধার্য করা হচ্ছে সাবেক এই বিচারপতির ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার মধ্য দিয়ে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে জানান, আমার ল’ ফার্ম কাজ শুরু করেছে। সময় হলেই তা জানাব।
নানাবিধ কারণে পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে প্যাটারসন সিটিতে বসবাসরত এস কে সিনহার এই গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের মুখে মুখে তা রটে যায় প্রবাসে। ‘এটি প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশ পাবে এবং শেখ হাসিনার সরকার আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’ বলেও জামায়াতপন্থী মিডিয়ার লোকজন প্রকাশ্যে বলে বেড়িয়েছে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে এস কে সিনহার বইটির মোড়ক উন্মোচন অথবা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাঙালি কোনো মিডিয়াকে আমন্ত্রণও জানানো হবে না বলে ওই মহল থেকে প্রচার করা হয়েছিল। মার্কিন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে সেটি করার কথা বলা হয়। যদিও কোনোটিই সত্য হয়নি। অধিকন্তু আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী নিউইয়র্কে জামায়াতী মিডিয়া এবং জামায়াত-শিবিরের পক্ষাবলম্বনকারী সাংবাদিকদের ডেকেই এস কে সিনহা সাক্ষাৎকার দিয়ে ওই গ্রন্থের কথা জানিয়েছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি নিজের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন সাম্প্রতিক গতিবিধির মাধ্যমে।
এদিকে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রে বিশিষ্ট কয়েকজনের সাথে মামলার ব্যাপারে কথা বলেছেন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলার প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। এই গ্রন্থে প্রকাশিত বক্তব্য অথবা মতামতে যারাই আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে হবে তারাই মামলায় বাদি হতে পারবেন। মার্কিন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার এ প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে মামলা করতে পারবেন। এতে কোনো বাধা নেই। তবে মামলার আবেদনের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ থাকতে হবে। তাহলেই প্রতিকার পাওয়া যাবে। এর আগে অনেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কে মামলার ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে ফলাফল শূন্য। এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করার আগেই সংশিøষ্টরা তা খতিয়ে দেখছেন। এ দিকে এস কে সিনহার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার এক ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশভিত্তিক কোনো মিডিয়ার সাথে তিনি কথা বলতে চান না। তার ধারণা, তিনি যা বলবেন তা একটি এজেন্সির ছাড়পত্র ছাড়া প্রকাশ বা প্রচারিত হবে না। যদিও তিনি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশভিত্তিক কয়েকটি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন এবং এগুলোর নেপথ্য মালিকানায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীরা বলে শোনা যাচ্ছে। তার অপর এক ঘনিষ্ঠজন জানান, নিউজার্সিতে যে বাড়িতে তিনি বাস করছেন সেটির মালিক হলেন তার ভাই। বাড়িটি ক্রয়ের সময়ে তিনি কোনো অর্থ সহায়তা দিয়েছেন কি না সেটি কেউ বলতে পারেননি। তবে ক্রেতার আয়-ব্যয়ের উৎস যাচাই করলে সে হদিস উদঘাটন করা কঠিন কিছু নয় বলে ইনকাম ট্যাক্সের লোকজন জানিয়েছেন।
এস কে সিনহার ঐ গ্রন্থটি এখন প্রবাসীদের হাতে হাতে। অনেকেই তা ওয়েবসাইট থেকে প্রিন্ট করেছেন। ঐ গ্রন্থের মাধ্যমে লাভবান হবেন বলে যারা মনে করছেন, তাদের পক্ষ থেকে নগদ মূল্যে ক্রয় করেও বিতরণ করা হচ্ছে। আমেরিকান রাজনীতিকদের কাছেও হ¯Íান্তর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সামগ্রিকভাবে এস কে সিনহার গ্রন্থ প্রকাশের পর ব্যাপক একটি আলোড়ন মার্কিন মুলøুকে শুরু হবে বলে যারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, তারা হতাশ হয়েছেন- এমন অভিমত সুধীজনের। কারণ, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই উলেøখ নেই ওই গ্রন্থে।
অপরদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। ঢাকায় তিনি বলেছেন, ‘আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সে সময় প্রধান বিচারপতি সিনহার সাথে কেন বসতে চাননিÑ তা প্রকাশ পেলে আরো দুর্গন্ধ ছড়াবে। তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরো নষ্ট হবে।’
গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিচারপতি সিনহা যা করছেন এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উনি নিজেই নষ্ট করছেন।’ এর ব্যাখ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘উনি প্রধান বিচারপতি থাকার সময় উনার সাথে যারা বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন, তাদের সম্পর্কে কোনো রকম কটূ মন্তব্য করা বা বাজে কথা বলা খুবই অগ্রহণযোগ্য এবং এই কাজটা করে উনি নিজেই বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেণের কারণে মতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুত ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.