এবিএনএ : দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে সরকারের পদক্ষেপে।’ শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর এই সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে যে তিনি (মুহিত) এমন একজনের (ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তার হাত ধরে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়) প্রশংসা করে ফেললেন যার কারণে আমার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিলো ওই বিশ্ব ব্যাংক। বারবার আমাকে থ্রেট (হুমকি) করা হয়েছিলো ওই আমেরিকা থেকে।’ ‘অথচ তিনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যাই হোক, এটা তাদের চিন্তা ভাবনা।’
সম্প্রতি ঢাকায় সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) এক অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকের প্রশংসা করে মুহিত বলেছিলেন, ‘একসময় এদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। সেখান থেকে এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংক (ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত) এ ভূমিকাটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে। হতদরিদ্র লোকের ঋণ পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। দারিদ্র্য কমাতে অবদান রাখা আরেকটি সংস্থা ব্র্যাক।’
মুহিতের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে ক্রেডিট নেয়। কয়দিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী খুব ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করে বললেন যে একেবারে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন যদি তার জন্যই হতো, তাহলে আর ওই ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন? আর আজকে ২২ ভাগে নেমে এসেছে কবে?’ ‘অর্থমন্ত্রীকে বলবো, উনি যেন একটু হিসাব নেন, এই যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর।’
‘আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে, এই অর্থমন্ত্রীও কর্মসূচি নিয়েছেন, আগের অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া (প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়া) সাহেবকে দিয়েও আমি সেই ৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছিলাম, তারই ফলাফলে আজকে এই দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।’ ক্ষুদ্র ঋণের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। আর যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে তারা সম্পদশালী হয়। তারা ধনশালী হয়। কারণ সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসাবে চলে যায়।’ ‘সে কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। আর যারা এই ব্যবসা করে তারা চায়ও না যে, এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে এলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে?’ পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটা কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে এবং আজকে এটা প্রমাণিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনীতি করতে এসেছি জনগণের জন্য। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়, আর ব্যবসা করার জন্যও নয়।’ ‘দরিদ্র মানুষকে নিয়ে ব্যবসা করে বড় লোক হওয়ার জন্য, বিত্তশালী হওয়ার জন্য আসি নাই। এসেছি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এসেছি জনগণের সেবা করতে। তাদের কল্যাণ করতে, জনগণকে সুন্দর জীবন দিতে। যার কারণে আজকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগ যখন আসে তখনই তো দেশের উন্নতি হয়- উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
‘শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি জাতির পিতার কন্যা। যখন থেকে রাজনীতি করি মানুষের সমস্যাটা জানার চেষ্টা করেছি।’ দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি গ্রামের মানুষের অর্থনীতিতে যেন স্বচ্ছলতা আসে। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অর্থনীতি যেন স্বচ্ছল হয়, গ্রামে টাকা দেওয়া, সরবরাহ করা, সেখানে বিনিয়োগ করা, সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজকে বাংলাদেশে ৫ কোটি মানুষ নিম্ন বিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দারিদ্র্যের হার কমতে শুরু করেছিলো। মাঝখানে বিএনপির ৫ বছর, তত্ত্বাবধায়কের দুই বছর থমকে ছিলো। ২০০৯ সালে সরকারে এসে আমরা ৫০ ভাগের কাছাকাছি দারিদ্র্যের হার পেয়েছিলাম। সেখান থেকে এই ৮ বছরে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২২ ভাগে নামিয়ে এনেছি এবং এটাকে আমরা আরও কমাবো।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশাররফ। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা।
১৪ বছর পর মহিলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন শুরু হয় সকাল ১১টায়। বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি অবমুক্ত করেন শান্তির প্রতীক পায়রা। পরে জাতীয় সংগীত, দলীয় সংগীত, জাগরণের গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.