জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

ভোটারের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ইভিএম : সিইসি

এবিএনএ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘ভোটের মর্যাদা, ভোট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, ভোট প্রদানের স্থায়ী সমাধান এবং ভোটারের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এতে করে ভোটের রাতে কেন্দ্র ও ব্যালট বাক্স পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে এ পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ছিনতাই, রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি এবং একজনের ভোট অন্যজন দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে, আইনগত ভিত্তি এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই কেবল ইভিএম ব্যবহার করা হবে।’

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে খুলনার জিয়া হল চত্বরে ইভিএম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে তিনি সড়ক পথে খুলনায় আসেন। সিইসি বলেন, ‘সরকার, জেলা-উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে জনগণ। জনগণের ভোট নিয়েই জনপ্রতিনিধিরা এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় নির্বাচনের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে ব্যালট পেপার ছিনতাই, রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি এবং একজনের ভোট অন্যজনে দিয়ে দেয়।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি কেসিসির সর্বশেষ নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে উল্লিখিত অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘ইভিএমে ভোট হলে এ ধরনের অনিয়মের কোনো সুযোগই থাকবে না। উপরন্তু নির্বাচনী ব্যয় এবং লোকবলের তিন ভাগের দুই ভাগের প্রয়োজনীয়তাই কমে যাবে। মূলত, জনপ্রতিনিধিদের ভোটারের ওপরে নির্ভরশীল করতেই ইভিএম পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।’ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার প্রসঙ্গ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যারা ইভিএমের বিরোধিতা করছেন, তারা আসলে ইভিএম সম্পর্কে না জেনেই করছেন।’ তিনি তাদেরকে ইভিএম সম্পর্কে ভালো করে জেনেশুনে ধারণা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে, সংশ্লিষ্টরা ইভিএমের ত্রুটি বা গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিলে সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইভিএমে অনিয়মের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যেমন ত্রুটি হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইভিএমেও ত্রুটি হতে পারে। আর সেটি হলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।’

এভিএম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না, উল্লেখ করে এ কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘এখনো ইভিএমের আইনগত ভিত্তি হয়নি। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি সংশোধন হলেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম প্রয়োগ করা হবে। তবে, সকল কেন্দ্রে সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে জাতীয় ও স্থানীয় সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।’ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩০ অক্টোবর থেকে কাউন্ট-ডাউন শুরু হবে। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।’ সেক্ষেত্রে  নভেম্বরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন সিইসি এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবেন।

জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিগত দিনে মোতায়েন করা হয়েছে। সেটি মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ বা অন্য কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আর আলোচনার সুযোগ নেই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. লোকমান হোসেন মিয়া, রেঞ্জ ডিআইজি মো. দিদার আহম্মদ, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ। স্বাগত বক্তৃতা করেন খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। ইভিএম সম্পর্কিত বিশেষ উপস্থাপনা করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

অনুষ্ঠান শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইভিএম প্রদর্শনী স্টল ঘুরে দেখেন। ইভিএম প্রদর্শনীতে নগরীর দুটি ওয়ার্ডের চারটি এলাকার ৭ হাজার ৩৯ জন ভোটার ইভিএমে ভোট দিতে পারবেন। উদ্বোধনের পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট গ্রহণের জন্য ১৪টি কক্ষ ও ১৫ সেট ইভিএম মেশিন রয়েছে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button