আমেরিকা

চার নারীর অভিযোগ ট্রাম্প অক্টোপাসের মতো ধরেন, চুমু দেন

এবিএনএ : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফের যৌন কেলেংকারির অভিযোগ করেছেন চার নারী।

তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প তাদের জড়িয়ে ধরে ও জোর করে চুম্বনের মাধ্যমে যৌন হয়রানি করেছেন। অভিযোগকারী একজন নারী বলেছেন, তিন দশক আগে একটি ফ্লাইটে ট্রাম্প তার স্তনে চাপ দেন এবং তার স্কার্টের ভেতরে হাত ঢুকানোর চেষ্টা করেন। আরেকজন নারী বলেন, ট্রাম্প জোর করে তার মুখে চুম্বন করেন। ২০০৫ সালে ট্রাম্প টাওয়ারে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগকারী চার নারীর মধ্যে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে দুই নারী এবং দ্য পাম বিচ পোস্ট ও ইয়াহু নিউজের কাছে পৃথক আরও দুই নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন।

তবে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা শিবির এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। প্রথম নারী ৭৪ বছর বয়সী জেসিকা লিডস। ম্যানহাটান নিবাসী এ নারী বলেন, একটি ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীর কেবিনে বসে নিউইয়র্ক ফিরছিলেন তিনি। তার পাশের আসনেই বসা ছিলেন ট্রাম্প।

তিনি প্রথমে জেসিকার ওপর তার হাত রাখেন এবং একপর্যায়ে তাকে স্পর্শ করতে শুরু করেন। ঘটনার সময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর। তিনি বলেন, সেদিন ট্রাম্পের আচরণ ছিল একটা অক্টোপাসের মতো। তিনি আমার শরীরের সর্বত্র হাতড়ে বেড়িয়েছেন। সেটা একটা যৌন হামলা ছিল। অভিযোগকারী দ্বিতীয় নারী রেচেল ক্রুকস। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ২২ বছর। তখন তিনি ট্রাম্প টাওয়ারের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই ভবনটির বাইরের দিকে একটি লিফটে ট্রাম্প তার ঠোঁটে চুম্বন করেন। রেচেল নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এটি ছিল একটি অগ্রহণযোগ্য ঘটনা। আমি এটা ভেবে খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, তিনি আমাকে এতো তুচ্ছ মনে করে এমন একটা কাজ করতে পারলেন।

এরআগে কোনো নারীই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে জেসিকা ও রেচেল তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। জেসিকা বলেন, ট্রাম্পের স্পর্শের ঘটনায় আমি ক্রুব্ধ ও বিক্ষুব্ধ ছিলাম। এরপর দ্রুত আমি প্রথম শ্রেণীর কেবিন থেকে ইকনোমি কেবিনে চলে আসি। রেচেল বলেন, ট্রাম্প তাকে জোর করে চুম্বনের পর তিনি তার ছেলেবন্ধুর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ট্রাম্প তার মডেলিং সংস্থায় কাজ দেয়ার কথা বলে রেচেলের ফোন নম্বর নেন। তবে কখনোই তিনি সেখান থেকে ফোন পাননি। এদিকে জেসিকা ও রেচেলের অভিযোগ সম্বলিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে পুরোপুরি বানোয়াট ‘কেচ্ছা’ আখ্যা দিয়েছে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবির। এক বিবৃতিতে তারা বলছে, পত্রিকাটি যোগসাজশ করে ট্রাম্পের চরিত্র হনন করতে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার করছে। নিতম্ব চেপে ধরেন পাম বিচ পোস্ট ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে মিনডি ম্যাকগিলিভরে নামের এক নারীর অভিযোগ।

মিনডি জানান, ২০০৩ সালে ফ্লোরিডায় মার-আ-লাগো ক্লাবে ট্রাম্প দু’হাতে তার নিতম্ব চেপে ধরেন। এ আচরণে অনেকটাই ভড়কে যান তিনি। ঘটনার সময় মিনডি ছিলেন ২৩ বছরের তরুণী। বর্তমানে তার বয়স ৩৬ বছর।তিনি ওই হয়রানির কথা কর্তৃপক্ষকে জানাননি। তবে মিনডির বর্তমান অভিযোগের ব্যাপারে আলোকচিত্রী কেন ডেভিডঅফ বলেন, তার মনে আছে তাকে মিনডি এক পাশে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প আমার নিতম্বে ধরেছে।’ ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের দাবি, মিনডির অভিযোগে যথার্থতা ও সত্যতার ঘাটতি রয়েছে। হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে তার পক্ষে জেসিকা, রেচেল ও মিনডি প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ ট্রাম্প শিবিরের। এদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিস ওয়াশিংটন ২০১৩ ক্যাসান্ড্রা সার্লস যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছে ইয়াহু নিউজ। ক্যাসান্ড্রার অভিযোগ, ট্রাম্প তার নিতম্ব ধরেন এবং হোটেলে তার কক্ষে যাওয়ার জন্য বলেন।

সম্প্রতি ২০০৫ সালের একটি ভিডিও ফাঁস হয়, যাতে দেখা যায়, ট্রাম্প একজন নারীকে জড়িয়ে ধরে তার শরীর হাতড়াচ্ছেন এবং নারীদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র চার সপ্তাহ আগে কুকীর্তির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন ট্রাম্প। ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে একে লকার রুমের বাতচিৎ বলে চালানো চেষ্টা করেন তিনি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র কংগ্রেসের স্পিকার পল রায়ানসহ বহু রিপাবলিকান নেতা  ট্রাম্পের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন।

এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প টুইটারে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি রিপাবলিকান দলের জিঞ্জির মুক্ত হয়েছেন এবং অবিশ্বস্ত রিপাবলিকানদের সমর্থন ছাড়াই নির্বাচনে জিতে তাদের শিক্ষা দেবেন। অবশ্য গত রোববার দ্বিতীয় নির্বাচনী বিতর্কের ঠিক আগ মুহূর্তে ট্রাম্পও তিন নারীকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেন, যারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের সাবেক স্বামী ও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button