আমেরিকা

আমেরিকায় নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে অতীতের ছায়া

এ বি এন এ : সংবাদপত্রে ট্রাম্প-পত্নীর নগ্ন ছবির প্রকাশ করে উস্কে দিয়েছে দুই দশকের পুরনো আরেকটি কেলেঙ্কারির স্মৃতি। এটা কি কাকতালীয় কিনা, ঠিক যে বছর ম্যানহাটনে আলে দ্য বাসেভিল নামে এক চিত্র গ্রাহক মেলানিয়ার নগ্ন ছবি তুলেছিলেন, সেই ১৯৯৫ সালেই ওয়াশিংটনে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে ‘গোপন’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সদ্য ২০ পেরনো মনিকা! মনিকা-বিলের সম্পর্ক ফাঁস হয়েছিল তার তিন বছর পর। সে সময়ের ফার্স্ট লেডি হিলারি এবার ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার পরে তাই খোঁজ পড়েছে মনিকার। তিনি কোথায়? ক্লিন্টনবৃত্ত থেকে বহুদিন আগেই বহু আলোকবর্ষ দূরে সরে যাওয়া মনিকা এখন সমাজকর্মী। সাইবার নিগ্রহ-সহ নানা ধরনের নিগ্রহ এবং কুৎসার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে শিশু এবং নারীদের উপরে নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব তিনি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখেন, দেশে-বিদেশে বক্তৃতা দেন। সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোন সংস্থার জন্য নিগ্রহের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ ‘ইমোজি সিরিজে’র নকশা তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ক্লিন্টনের সঙ্গে সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পরে দীর্ঘদিন প্রচারের আলো তাড়া করেছে মনিকাকে। কুৎসায় জর্জরিত হয়ে এক সময়ে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন। তারপর এসব থেকে দূরে যেতেই পাড়ি দেন লন্ডনে। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে ‘সোশ্যাল সাইকোলজি’তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে শুরু করেন ফ্যাশন ডিজাইনিং।  বছর দু’য়েক আগে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখেছিলেন মনিকা। যা তার খ্যাতির কারণ, সেই ক্লিন্টনের সঙ্গে সম্পর্কের বিশদ ব্যাখ্যা ছিল সেই প্রবন্ধে। যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন ‘পরিস্থিতির সুযোগ’ নিলেও তাদের সম্পর্ক ছিল দু’জনের সম্মতিতেই। এরপর থেকেই সমাজকর্মীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে মনিকাকে। সাইবার নিগ্রহ, ‘ট্রোলে’র বিরুদ্ধে তিনি যতটা সরব, ততটাই তীব্র ভাষায় দাবি করেন ইন্টারনেটকে হতে হবে আরও বেশি ‘সহানুভূতিশীল’। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেছিলেন, ‘‘কুৎসা মানুষকে কতটা অসহায় করে তোলে, নিজের অভিজ্ঞতায় জানি। লজ্জা, অপমান আলকাতরার মতো শরীরে লেগে থাকে। একবার হেনস্থা হওয়া মানুষ ফের হেনস্থার আশঙ্কায় নিজেকে যে কোন অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে পারে। তাদের সহমর্মিতার প্রয়োজন।’’ এদিকে স্ত্রীয়ের নগ্ন ছবি প্রকাশিত হওয়ায় নাকি এতটুকু বিচলিত নন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং তিনি আপাতত দেশের ভবিষ্যত চিন্তাতেই মনোনিবেশ করেছেন। তবে ট্রাম্পের মন যেখানেই থাকুক, ভোটমুখী আমেরিকার মনে অবশ্যই সাড়া ফেলেছে মেলানিয়া ট্রাম্পের নগ্ন ছবি। যার মোকাবিলায় সরব হয়ে ব্যাখ্যা সাজাতে শুরু করেছে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর প্রচার শিবির। ডোনাল্ডের মুখপাত্র জেসন মিলার আমেরিকার একটি সংবাদ চ্যানেলে প্রথমে জানিয়েছিলেন, ওই ছবিগুলি যখন তোলা হয় তখন ট্রাম্প মেলানিয়াকে চিনতেন না! তদুপরি, ওই ছবিগুলি যখন তোলা হয় তখন মেলানিয়া ছিলেন পেশাদার মডেল। বিতর্ক সামাল দেওয়ার পক্ষে এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয় আঁচ করেই সম্ভবত আরেকটু ‘আক্রমণাত্মক’ হয়েছে ট্রাম্প শিবির। শিল্প এবং ব্যক্তি শরীরের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে মিলারকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওই ছবি মানব শরীরের শিল্পসম্মত উদযাপন! এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। মেলানিয়া তো একজন সুন্দরী মহিলা।’’ এসবের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে অন্য জল্পনাও। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ওই ছবি ট্রাম্পের শিবির থেকেও প্রকাশ করা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, সম্প্রতি আমেরিকার এক নিহত মুসলিম সৈনিকের পরিবার সম্পর্কে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর কটাক্ষ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তা থেকে নজর ঘোরাতে এটা ট্রাম্পেরই কৌশল হয়ে থাকতে পারে! এই মুহূর্তে আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ট্রাম্পের অতীত জীবনের আরও একটি ঘটনা। আমেরিকার একটি সংবাদপত্র দাবি করেছে, দ্বিতীয় স্ত্রী ইভানার সঙ্গে বিচ্ছেদের আগেই ট্রাম্প আমেরিকার ঘোড়া ব্যবসায়ী তথা ‘মবস্টার’ ক্যাসিনো মালিক রবার্ট লিবুত্তির ৩০ বছর বয়সী মেয়েকে উত্যক্ত করতে শুরু করেছিলেন। তা জানতে পেরে রবার্ট লিবুত্তি ট্রাম্পের ‘পুরুষাঙ্গ কেটে নেওয়ার’ হুমকি দেন! তার আগে অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই ছিল লিবুত্তির। আর ইভানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘যেদিন থেকে ইভানা বাইরে কাজ করতে শুরু করল এবং আমার জন্য রান্না করা বন্ধ করল, সেদিন থেকেই আমাদের বিয়ে ভেঙে যায়!’’ রিপাবলিকান পার্টির বর্ষীয়ান উপদেষ্টা এড রলিন্স অবশ্য বলেন, ‘‘এখন সকলে কারদাশিয়ানদের দেখে অভ্যস্ত। ২০ বছরের পুরনো ছবি এক সপ্তাহের মধ্যেই লোকে ভুলে যাবে।’’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button